নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নের মাড়িয়া গ্রামে ২০০৫ সালে টুটুল হাসানের জন্ম। তিনি জম্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। দু’চোখে একেবারেই দেখেন না। শারীরিক সীমাবদ্ধতার সঙ্গে নানা সংকট ও প্রতিকূলতা তার নিত্যসঙ্গী। তবে এসব বাধা-বিপত্তি আটকাতে পারেনি তার অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে। একেবারে হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া টুটুল অন্ধত্বকে জয় করে ছোটবেলা থেকেই উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার জন্যে জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করে চলেছেন।
সে এখন স্বপ্ন দেখছেন পড়ালেখা শেষ করে আদর্শ শিক্ষক হওয়ার। তার আগামীর এই স্বপ্ন পূরণে বড় বাধা 'আর্থিক অসচ্ছলতা'।
জানা যায়, দুই চোখে আলো না থাকার পরও মাড়িয়া গ্রামের কৃষক মহির আলী ও গৃহিণী মমেনা বেগম দম্পত্তির বড় ছেলে টুটুল হাসান পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজ ইচ্ছা শক্তিকে পুজিঁ করে বেল পদ্ধতিতে রাজশাহীর ষষ্ঠীতলা বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় (পিএইচটি সেন্টার) থেকে ৫ম শ্রেণি এবং সিরাজগঞ্জের এস.বি. রেলওয়ে কলোনী স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৩ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট নিয়ে ২০২১ সালে এসএসসি পাস করেন। বর্তমানে ঢাকার মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন। সিট পেয়েছেন কলেজটির প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম ছাত্রাবাসের জরার্জীণ একটি কক্ষে। তবে আর্থিক সংকটে বর্তমানে অবস্থান করছেন নিজ বাড়ি মাড়িয়া গ্রামে।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী টুটুল হাসান বলেন, 'একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী জীবনের এতদূর পাড়ি দিতে কত যে কষ্ট সইতে হয়, তা বলে বোঝানো যাবে না। তবে শত বাধা-সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কখনও পড়ালেখা থেকে পিছপা হয়নি। সামনের দিনগুলোতে এগিয়ে যেতে চাই। ভালোভাবে পড়ালেখা শেষ করে আদর্শ শিক্ষক হয়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে কাজ করতে চাই।
টুটুল হাসানের বাবা মহির আলী বলেন, দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী টুটুল হাসান সবার বড়। পরিবারের চরম আর্থিক সংকটের মধ্যেও টুটুল হার মানতে রাজি নয়। তার এমন অধ্যবসায়ের কারণে দৃষ্টিহীন হওয়া স্বত্তেও বিগত পরীক্ষাগুলোতে অনন্য ফলাফল করেছে। আর্থিক সহযোগিতা পেলে সে অবশ্যই ভালো কিছু করবে।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, প্রবল ইচ্ছাশক্তি দিয়ে অভাবের সংসারেও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী টুটুল পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। সমাজসেবা অফিসের পক্ষ থেকে তাকে সামান্য কিছু টাকা সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে টুটুলের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে আরও অনেক সহযোগিতা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পংকজ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, টুটুল অন্ধত্বকে জয় করে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার জন্যে জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করে চলেছেন। হতদরিদ্র টুটুল হাসানকে আমি সাধুবাদ জানাই। উপজেলা প্রশাসন থেকে সাধ্যমতো সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে তাকে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. মিজানুর রহমান।
বার্তা সম্পাদক : বকুল হোসেন, সহ-বার্তা সম্পাদক : সৈয়দ মাহমুদ শাওন