দুলাল আচায : প্রায় সাড়ে চৌদ্দ বছরে বাংলাদেশে ডিজিটাল রূপান্তরের অভিযাত্রায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ ঘটেছে। প্রযুক্তিভিত্তিক তথ্য ও সেবা পৌঁছে গেছে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায়। বিশেষজ্ঞরা তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক এই অবিস্মরণীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে আখ্যায়িত করছেন ‘ডিজিটাল রেনেসাঁ’ হিসেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সারথি সজীব ওয়াজেদ জয়। আজ তার ৫২তম জন্মদিন। জয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার পুত্র এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র। ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই পাকবাহিনীঘেরা অবরুদ্ধ ঢাকায় ওয়াজেদ মিয়া ও শেখ হাসিনা দম্পতির ঘর আলো করে জন্ম নেন তিনি। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু তার নাম রাখেন ‘জয়’। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন।
বঙ্গবন্ধুর জীবনে শেষ পারিবারিক উৎসব ছিল ১৯৭৫ সালের ২৭ জুলাই দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠান। বঙ্গবন্ধু ছাত্রজীবন থেকেই সক্রিয় রাজনীতিবিদ হওয়া পর্যন্ত দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন সব সময়। এর মধ্যে বিশাল একটা সময় (৪ হাজার ৬৮২ দিন) জেলজীবন। তাই বাবা-মা, স্ত্রী ও পুত্র-কন্যাদের সময় দিতে পেরেছেন খুবই কম। বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন একুশে টেলিভিশনে এক স্মৃতিকাতর অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন এভাবে:
‘২৭ জুলাই বড় মেয়ে শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিনের সাদামাটা অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুও উপস্থিত ছিলেন। খুবই সাদামাটা এই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব এদিন সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে ছবি তোলেন। শিশু জয়ও সেদিন নানার টুপি মাথায় নিয়ে পোজ দেন। এ দিনটিই যে তাদের পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে আনন্দ উদযাপনের শেষ দিন তা কি কেউ কল্পনা করতে পেরেছিল?’
উল্লেখ্য, জয়ের জন্মদিন পালনের দুইদিন পর ৩০ জুলাই (১৯৭৫) শেখ হাসিনা ছোট বোন শেখ রেহানা, ছেলে জয় ও মেয়ে পুতুলকে নিয়ে জার্মানি চলে যান। সেদিন শেখ হাসিনার অনিচ্ছা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে স্বামী পরমাণুবিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার কর্মস্থল জার্মানিতে যেতে হয় তাদের। ইতিহাসের বাস্তবতা এই ‘নির্দেশ’ পালনেই প্রাণে বেঁচে যান তারা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার সময় মা-বাবার সঙ্গে জার্মানিতে ছিলেন জয়। পরে সেখান থেকে মায়ের সঙ্গে রাজনৈতিক আশ্রয়ে চলে যান ভারতে। জয়ের শৈশব ও কৈশোর কাটে ভারতে। সেখানকার নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজে লেখাপড়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০০২ সালের ২৬ অক্টোবর ক্রিস্টিন ওভারমায়ারকে জীবনসঙ্গী করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। ছাত্রজীবনে প্রকাশ্য রাজনীতির প্রতি অনীহা থাকলেও সক্রিয় ছিলেন অন্তরালে। প্রকাশ্য রাজনীতিতে নাম লেখান ২০১০ সালে। ওই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিতৃভূমি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ দেওয়া হয় তাকে। এটাই তার আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে অভিষেক। ২০০৭ সালে জয় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কর্তৃক গ্লোবাল লিডার অব দ্য ওয়ার্ল্ড হিসেবে নির্বাচিত হন।
দেশের আইসিটি খাতের উন্নয়নে সফল নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার স্বপ্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার নেপথ্য কারিগর হিসেবে কাজ করছেন চৌকশ, মেধাবী এই কম্পিউটার বিজ্ঞানী। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় জাতির পিতার দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ মহাকাশে প্রতিস্থাপনের নেপথ্য নায়ক।
১২ ডিসেম্বর, ২০০৮ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার বিষয়টি তুলে ধরে। এই ধারণাটি জয়ের উদ্যোগেই সংযুক্ত হয়। সজীব ওয়াজেদ জয় সে সময়ই ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে দেখতে পেয়েছিলেন। ইশতেহারে ঘোষণা করা হয়, ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এ পরিণত হবে। একটি উন্নত দেশ, সমৃদ্ধ ডিজিটাল সমাজ, একটি ডিজিটাল যুগের জনগোষ্ঠী, রূপান্তরিত উৎপাদন ব্যবস্থা, নতুন জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি সব মিলিয়ে প্রজ্ঞাময় সমাজ গঠনের স্বপ্নই দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য যে সমৃদ্ধ ও উন্নত জীবন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নপূরণ করছে। সাড়ে চৌদ্দ বছরে বাংলাদেশে ডিজিটাল রূপান্তরের অভিযাত্রায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ ঘটেছে। প্রযুক্তিভিত্তিক তথ্য ও সেবা পৌঁছে গেছে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নবাস্তবায়নের সারথি সজীব ওয়াজেদ জয়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে জয় নিজেকে আধুনিক বিশ্বের এক তরুণ উদ্ভাবক হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তার দূরদর্শিতা আর মেধার সমন্বয়েই বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে।
পর্দার অন্তরালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থেকে গোটা দেশে তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব ঘটিয়েছেন এই তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে দলীয় ঘরানা ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি-রাজনীতি, সামাজিক-অর্থনৈতিক, শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ, তরুণ উদ্যোক্তা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন জয়। বিশেষ করে দেশের উদ্দীপ্ত তরুণদের দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আত্মনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মসূচি ও পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি। দেশ গঠনে তরুণদের অভিমত, পরামর্শ শুনতে জয়ের ‘লেটস টক’ ও ‘পলিসি ক্যাফে’ দুটি প্রোগ্রাম ইতোমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। এছাড়া তিনি তরুণ উদ্যোক্তা ও তরুণ নেতৃত্বকে একসঙ্গে যুক্ত করার পাশাপাশি প্রশিক্ষিত করতে তরুণদের বৃহত্তম প্ল্যাটফর্ম ‘ইয়াং বাংলা’র সূচনা করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘ঢাকা মানে বাংলাদেশ নয়, ঢাকার বাইরের বাংলাদেশই হলো আসল বাংলাদেশ।’ তারই সুযোগ্য দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে গ্রাম ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে গুরুত্ব দিয়ে স্বল্পসময়ে তৃণমূল পর্যায় পযন্ত প্রযুক্তিসেবা পৌঁছে দিয়েছেন, যার সুফল গ্রামের মানুষ ভোগ করছে। সাম্প্রতিককালে দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতে অর্জিত হয়েছে অসামান্য সাফল্য, বেড়েছে সক্ষমতা। করোনার এ সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করে নির্বিঘেœ ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামাজিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখা তারই প্রমাণ। দেশের লাখ-লাখ তরুণ এখন ঘরে বসে আয় করছে। প্রতিযোগিতা করছে বিশ্বব্যাপী। এসব তরুণের মাঝে স্বপ্ন বুনে দিয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। মেধাবী এই তরুণের হাত ধরেই বাংলাদেশ আজ সমৃদ্ধির সোনালি সোপানে পৌঁছেছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ইন্টারনেটকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। ইউনিয়ন পর্যায়ের পাশাপাশি চর বা পার্বত্য অঞ্চলের মতো প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। যেসব এলাকা ইন্টারনেট-সুবিধার বাইরে রয়েছে, কাজ চলছে সেখানেও। জানা যায়, ২০১০ সালে ইউনিয়ন পর্যায়ে গড়ে তোলা হয় ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। ২০১৪ সালে উচ্চগতির ফাইবার অপটিক ক্যাবল দিয়ে জেলা পর্যায়কে ইন্টারনেট সুবিধার আওতায় আনা হয়। ২০১৫ সাল থেকে সেটি উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণ শুরু হয়। বর্তমানে দেশের প্রায় সব ইউনিয়নে এই সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। দেশে এখন কার্যত ১২ কোটি মানুষ ইন্টারনেট-সুবিধা পাচ্ছেন।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের চোখে সজীব ওয়াজেদ জয় একজন ‘ভিশনারি লিডার’। তিনি এদেশের আইসিটি সেক্টরকে উন্নতির শিখরে নিয়ে গেছেন। তরুণদের উজ্জীবিত করেছেন মৌলিক গবেষণায়। জয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি পরামর্শক হিসেবে দেশের তারুণ্য শক্তিকে জাগ্রত করে তাদের সংগঠিত করে দেশ পরিচালনায় সম্পৃক্ত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নয়নে ভূমিকা রাখা তারুণ্যনির্ভর ৩০টি সংগঠনের হাতে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দিয়েছিলেন। তার এসব সৃজনশীল উদ্ভাবনী উদ্যোগ দেশের তরুণ প্রজন্মকে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস। ডিজিটালাইজেশনের সুযোগ গ্রহণ করে আমাদের তরুণ প্রজন্ম আইসিটি পণ্য উদ্ভাবন, বিদেশে রপ্তানি এবং আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছে। এসব উদ্যোগের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৭ সালে তিনি ২৫০ জন তরুণ বিশ্ব নেতার মধ্যে একজন হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী, প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ তার এই স্বপ্ন, প্রয়াস ও কর্মকৌশলকে নিজেদের রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করার সুফল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। ১৪ বছর আগে আওয়ামী লীগের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচির সূচনা হয়েছিল, আজ বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া। সজীব ওয়াজেদ জয় বারবারই বলেন, তরুণ নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখতে হবে আমাদের। কারণ তরুণরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে দরকার যুবসমাজের পরিশ্রম। বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার, রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই এটা উপলব্ধি করেছেন সেটা নিশ্চিত। তার এই প্রচেষ্টা এগিয়ে যাক, স্বপ্নপূরণ হোক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার।
লেখক : সাংবাদিক
Leave a Reply