নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর :
অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তবুও দমে যাননি রাজশাহীর তানোরের এস এম রায়হান। দরিদ্রকে হার মানিয়ে সাফল্যের মুখ দেখেছেন তিনি। রায়হান এবার সদ্য সমাপ্ত হওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অধিকার অর্জন করেছে।
সে তানোর তানোর পৌরশহরের ভাতরন্ড এলাকার হাসিনা বিবি ও আইনাল হক দম্পত্তির ছেলে। তার মা গৃহিনী এবং বাবা একজন ভূমিহীন বর্গাচাষী কৃষক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানাটানির সংসারে তিনবেলা খাবারই জোটে না। পরিবার নিয়ে থাকার জায়গাটুকুও নেই। বাবা অসুস্থ হওয়ার পরে সংসার দেখাশোনার দায়িত্ব রায়হানের কাধে উঠে। তারপর আবার পড়ালেখার খরচ। তবে এতকিছুর পরও পরিবারকে হতাশ করেননি রায়হান। তিনি এবার রাবির ‘এ’ ইউনিট ও ঢাবির ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান অর্জনের পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় ‘সি’ ইউনিটে সবাইকে তাক লাগিয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন।
ছেলের এমন ভালো ফলাফল হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় বাবা আইনাল হক বলেন, আমি নিষ্ঠুর গরিব মানুষ। তবে আমার ছেলেটা ছোট থেকেই খুব মেধাবী। তাকে লেখাপড়ার জন্য কখনও বলতে হয়নি। আমার ১ ছেলে ও ১ মেয়ে। তার মধ্যে রায়হান ছোট।
অদম্য মেধাবী এস এম রায়হান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমার বাবা একজন ভূমিহীন বর্গাচাষী কৃষক। তাই আমাদের সংসারে দরিদ্রতা একটা নিত্য সঙ্গী ছিলো। তার উপরে আবার আমার বাবা একজন অসুস্থ মানুষ তাই সংসার দেখাশোনার দায়িত্ব আমার কাধেই ছিলো। এরমধ্য দিয়েই আমি আমার পড়াশোনা মোটামুটি চালাতে থাকি। এমন সময় হঠাৎ করে চলে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময়। নানান ধরনের প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও আমার মা-বাবা আমাকে রাজশাহীতে পাঠাই। সেখানে কয়েক মাসের চরম দরিদ্রতার সাথে লড়াই করে অবশেষে আমি আল্লাহর অশেষ রহমতে সফল হতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, পড়ার ইচ্ছা থাকলেও অভাব কোনো বাধা নয়। শিক্ষকদের কাছ থেকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখেছি। এজন্য আমার শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। বিশেষ করে রাজশাহীর ইউসিসি কোচিং সেন্টার ও আশিক ইংলিশ সলুশোন এবং তানোর সদরের আরাফ ইংলিশ সেন্টার কর্তৃপক্ষের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো। ‘আমি ভবিষ্যতে আমার স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে চাই, দেশ ও দশের মান রাখতে চাই। পড়ালেখা শেষ করে শিক্ষা ক্যাডারে আত্মনিয়োগ করতে চাই।’
আরাফ ইংলিশ সেন্টারের পরিচালক আব্দুল লতিফ আরাফ বলেন, রায়হান অনেক মেধাবী ছাত্র ছিল। এছাড়াও তার পরিবারের লোকজনও বলতো বাড়িতে সব সময় লেখাপড়া করে রায়হান। সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ‘সি’ ইউনিটে তৃতীয় হওয়ায় আমরাও আনন্দিত।
এস এম রায়হান ২০১৯ সালে স্থানীয় আকচা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০২১ সালে সরকারি আব্দুল করিম সরকার কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল।#
Leave a Reply