তানোরবার্তা ডেস্ক : ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বগুড়ার চামড়া ব্যবসায়ীদের ২২ কোটি টাকারও বেশি বকেয়া আছে। এতে অর্থ সংকটে এবারের ঈদে পশুর চামড়া সংগ্রহ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ব্যবসায়ীরা। আবার অনেকে বকেয়া টাকা না পেয়ে ব্যবসাও ছেড়েছেন। এদিকে লবণের দাম বৃদ্ধিতে চামড়া সংরক্ষণ নিয়েও বিপাকে আছেন তাঁরা।
বগুড়া পৌর শহরের চকসূত্রাপুরে চামড়ার আড়তগুলো কয়েক বছর আগেও কেনাবেচায় মুখরিত থাকলেও এখন সেই দৃশ্য চোখে পড়ে কম।
বগুড়ার চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি জানিয়েছে, জেলায় চামড়া ব্যবসায়ী ৩০০ জন, আড়তদার আছেন ২২ জন। ঈদুল আজহার সময় আরও কয়েকশ ফড়িয়া ব্যবসায়ী কাজ করেন। ঢাকার ১৫ ট্যানারি মালিকের কাছে তাদের মোট পাওনা ২১ কোটি ৭৬ লাখ ১০ হাজার ১৬৫ টাকা।
বগুড়ায় বছরের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ হয় ঈদুল আজহায়। তবে গত দুই মৌসুমে চামড়ার অস্বাভাবিক নিম্নমুখী দামে ব্যবসায়ীরা হতাশ। আবার ট্যানারির মালিকরা চামড়া কেনা ও দাম পরিশোধের সময় সিন্ডিকেট করে দাম কম দেন, টাকাও শোধ করেন অল্প অল্প করে। ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
গত বছর ৭৪ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা লবণের দাম ছিল ৮০০-৮৫০ টাকা, যা এবার বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩৩০ টাকা। ফলে চামড়া সংরক্ষণের খরচ গত বছরের তুলনায় দেড় গুণ ছাড়িয়ে যাবে।
বগুড়ার চামড়া ব্যবসায়ী মঞ্জুর রহমান ট্যানারি মালিকদের কাছে পান প্রায় এক কোটি ৬২ লাখ টাকা। চামড়ার বাজারে মন্দাভাব বিরাজ করায় কয়েক বছর ধরে তিনি লাভের মুখ দেখতে পারেননি। টাকার অভাবে এবার প্রস্তুতি নিতে পারছেন না তিনি।
মঞ্জুর রহমান বলেন, একদিকে লোকসান অন্যদিকে বকেয়া, এভাবে মূলধন শেষ। আগের ঋণ পরিশোধ করতে পারিনি। নতুন করে ঋণ দিচ্ছে না ব্যাংক। ফলে আসন্ন ঈদে চামড়া কেনা মুশকিল হয়ে পড়বে।
বগুড়া চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকারও একই সংকটের কথা বলছেন। তার নিজেরও প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে ট্যানারি মালিকদের কাছে। প্রতিবছর অল্প কিছু টাকা আদায় করতে পারেন তিনি।
আব্দুল মতিন বলেন, চামড়ার বাজারে বড় ধাক্কা লাগে করোনার সময়। এছাড়া ট্যানারিগুলো হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তরের কারণেও আমাদের সংকটে পড়তে হয়েছে। তবে এসব সমস্যা এখন অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছি। কিন্তু আমাদের দরকার টাকা। এবার কোরবানির মৌসুমে চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় দেড় লাখ পিস। টাকা না পেলে এ চামড়া সংগ্রহ সম্ভব না। এরই মধ্যে অনেক ছোট ব্যবসায়ী নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ট্যানারির মালিকদের কাছে থাকা বকেয়া টাকার একটি তালিকা দিয়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঈদের আগেই ট্যানারির মালিকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে জেলা প্রশাসন।
সূত্র : জাগোনিউজ২৪.কম।
Leave a Reply