মো: মাহিন খাঁন:
আত্মহত্যা বা আত্মহনন (suicide) হচ্ছে কোন ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেওয়া বা স্বেচ্ছায় প্রাণনাশের প্রক্রিয়া বিশেষ।
ল্যাটিন ভাষায় সুইসাইডের থেকে আত্মহত্যা শব্দটি এসেছে। যার অর্থ হচ্ছে নিজেকে হত্যা করা। ডাক্তার বা চিকিৎসকগণ আত্মহত্যার চেষ্টা করাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।প্রায় ধর্মগ্রন্থে আত্মহত্যাকে অনুৎসাহিত করা হয়েছে এবং পাপ বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে।
প্রাচীন এথেন্স আত্মহণনকারী কে সম্মানের সাথে কবর দেওয়াকে অস্বীকার করা হতো। আত্মহত্যাকে ইউরোপেও একটি পাপ হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। ৪৫২ খ্রিস্টাব্দে Arles এর কাউন্সিলে আত্মহত্যাকে শয়তানের কাজ হিসেবে নিন্দা করা হয়েছিল। যদিও রেনেসাঁর সময় থেকে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন শুরু হয়। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বেশিরভাগ দেশে আত্মহত্যা বৈধ হয়ে উঠেছিল।
মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন হতাশা, জীবনের আনন্দ হারিয়ে ফেলা, বিষন্নতা এবং উদ্বিগ্নতা। এছাড়াও সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা কমে যাওয়া, আবেগ নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা ইত্যাদি। সাম্প্রতিক জীবনের চাপ যেমন – পরিবারের সদস্য বা বন্ধুকে হারানো, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায় অবিবাহিতরা আত্মহত্যার জন্য চরমভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। যৌন নির্যাতন সহ শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন নির্যাতন এক বিরাট অংশকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়। দরিদ্রতা, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতাও আত্মহত্যার অন্যতম কারণ।
তারুণ্যের এক বিরাট অংশ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। যৌবনের তাড়নার অধিকাংশ সময়ে চঞ্চলতা কাজ করে। যার ফলে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পেরে আবেগতাড়িত হয়ে আত্মহত্যার মতো নিকৃষ্ট পথ বেছে নেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর নেতিবাচক প্রভাব আত্মহননের অন্যতম কারিগর। আমাদের বাংলাদেশে দিন দিন আত্মহত্যার হার বেড়েই চলেছে। যাদের অধিকাংশই তরুণ সমাজ। বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা থাকলেও বাংলাদেশী প্রেক্ষাপটে বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যর্থতা অর্থাৎ কাঙ্খিত ফল অর্জন করতে না পারা এবং অবৈধ সম্পর্কের কুপরিনতি আত্মহত্যার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা তারুণ্যের এক বিরাট অংশের মাঝে পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ বর্তমান সমাজে তরুণরা আত্মহত্যা সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে অবস্থান করছে। এক্ষেত্রে নারীদের তুলনায় পুরুষরা ১.৮ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ আত্মহত্যার দরুন ঝরে গেল ঢাবি শিক্ষার্থী ফিরোজের প্রাণ। যেখানে পারিপার্শ্বিক আবহ থেকে সম্পর্কে বিচ্ছেদ এর তথ্য শোনা যাচ্ছে।প্রতিনিয়ত এমন অহরহ ঝরে যাচ্ছে ফিরোজদের প্রাণ। সম্পর্কে বিচ্ছেদ, পরীক্ষায় অকৃতকার্য বা এডমিশন পিরিয়ডের ব্যর্থতাসহ অসংখ্য কারণ ফিরোজদেরকে কেড়ে নিচ্ছে ভয়াবহ ভাবে।
আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়। আত্মহত্যাকে চিরতরে নিরুদ্দেশ করতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতা। পরিবারের সদস্য, সমাজের সকল স্তরের মানুষ, সারাউন্ডিংস সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আত্মহত্যার প্রতিকার সম্ভব। মানসিকভাবে দৃঢ় হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক সম্পর্কের উন্নয়ন, সুসম্পর্ক,সঠিক পদক্ষেপ,শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন,সম্পর্কের বোঝাপড়া, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা আত্মহত্যা কে দূরে ঠেলে দিতে সক্ষম।
আমাদের সকলের উচিত আত্মহত্যাকে নিরুৎসাহিত করা। সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা অর্জন করা। সর্বোপরি সকলের সচেতনতায় আত্মহত্যা মোকাবিলা করে গড়ে তুলতে হবে সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত বিশ্ব।
লেখক:
মো: মাহিন খাঁন
রি-অ্যাডমিশন ক্যান্ডিডেট
এইচএসসি – ২০২২
Leave a Reply