নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর : রাজশাহীর তানোরে বিলুপ্তপ্রায় ধানের বীজ বিনিময় ও নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। উৎসবে ১০ জন কৃষক নিজেদের মধ্যে ধানের বীজ বিনিময় করেন। শনিবার (৯ডিসেম্বর) দুই পর্বে দিনব্যাপী উপজেলার দুবইল স্কুল মাঠে নবমবারের মতো এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
লুপ্ত ধানের সংগ্রাহক ইউসুফ মোল্লার প্রতিষ্ঠিত ‘বরেন্দ্র কৃষক বীজ ব্যাংকের’ নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। এতে সহযোগিতা করছে বারসিক নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। নিয়ম অনুযায়ী, এক কেজি বীজ নিয়ে চাষ করলে মৌসুম শেষে দুই কেজি বীজ ব্যাংকে ফেরত দিতে হয়। এতে বীজ ব্যাংক বীজে সমৃদ্ধ হয়। কৃষকেরা চাহিদা অনুসারে বীজ নিতে পারেন। এবারের উৎসবে রাজশাহীর তানোর, পবা, গোদাগাড়ী, নাচোল ও নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার প্রায় ৩০০ জন কৃষক ও কিষানি অংশ নেন। উৎসবের আগের দিনরাত থেকে চলতে থাকে বৈচিত্র্যময় পিঠাপুলি বানানোর কাজ। এ কাজে সহযোগিতা করেন গ্রামের নারীরা।
বরেন্দ্র কৃষক বীজ ব্যাংকের সভাপতি জাইদুর ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন, তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিল্লাল হোসেন। অন্যদিকে, অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি বিজয় বসাক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, নদী ও পরিবেশ গবেষক মাহাবুব সিদ্দিকী।
এ ছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন, রাবি’র ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা তারিকুল আহসান, অধ্যাপক উদয় সংকর বিশ্বাস, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুস সবুর, তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এটিএম কাওছার আহমেদ, জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত কৃষিবিজ্ঞানী পলাশ মাহমুব, পদকপ্রাপ্ত স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদ, তাহেরপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম শান্তি, বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহমুদ জামান কাদেরী, বিশিষ্ট কবি ও কথা সাহিত্যিক মঈন শেখ, কবি রেজাউল ইসলাম, বিশিষ্ট ছড়াকার আফাজ উদ্দিন কবিরাজ, বরেন্দ্র কবি সার্জেন্ট (অব:) আলালউদ্দিন, বেসরকারি এনজিও বারসিকের কর্মসূচি কর্মকর্তা অমৃত কুমার প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন, কলেজ প্রভাষক আমজাদ হোসেন।
ইউএনও বিল্লাল হোসেন বলেন, বীজগুলো আমাদের দেশের সম্পদ। বরেন্দ্র কৃষক বীজ ব্যাংক চমৎকার কাজ করছে। বিশেষ করে কৃষকেরা এখান থেকে বীজ নিয়ে চাষ করে আবার বীজ ফিরিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন। এটা অনেক ভালো একটা দিক। এতে দেশি ধানের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অনুষ্ঠান শেষে কৃষেকরা নিজেদের মধ্য বীজ বিনিময় করেন। পরে অনুষ্ঠানে আসা অতিথিদের ঐতিহ্যবাহী পিঠা ও বিভিন্ন জাতের ধানের ভাত দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
ইউসুফ মোল্লা তাঁর কাজের জন্য জাতীয় পরিবেশ পদক-২০১৩ পেয়েছিলেন। তিনি দেশি জাতের ধানবীজসহ বিভিন্ন সবজি বীজ রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাঁর ব্যাংকের সংগ্রহে আছে ৩০০টি জাতের ধানবীজ, ২৫ জাতের বিভিন্ন দেশীয় সবজিবীজ ও ১৫ জাতের রবিশস্যের বীজ। ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি ইউসুফ মোল্লা মারা গেছেন। মৃত্যুর পর তাঁর ছোট ভাই জাইদুর রহমান এই ব্যাংকের হাল ধরেছেন।#