নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর : রাজশাহীর তানোরের মোহর গ্রামের ফসলি মাঠে চাষাবাদের লক্ষে প্রায় ২০ বছর আগে ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপন করা হয় একটি গভীর নলকূপ। প্রথম দিকে গভীর নলকূপটি ডিজেল চালিত হলেও বিগত কয়েক বছর ধরে তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকটা বন্ধ হয়ে পড়ে সেটি। পরে ওই নলকূপটি সচল রাখতে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মিলন রানা নামে স্থানীয় এক কৃষি উদ্দোক্তা। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, নতুন করে উপজেলা সেচ কমিটির অনুমোদন ছাড়া ওই গভীর নলকূপটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন নিমার্ণ করা যাচ্ছে না।
গভীর নলকূপটির মালিক মিলন রানা বলেন, মোহর মৌজায় ১৪৬ নং জেএল ও ৭১১ নং দাগের ফসলি মাঠের ধান ও অন্য ফসলের সেচ দিতে ২০০৪ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওই গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। স্থাপনের পর থেকে নলকূপটি ডিজেল তেল দিয়ে চালানো হচ্ছিল। এরপর থেকে গভীর ওই নলকূপটি দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় আছে। বর্তমানে এই উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন হলেও আমরা প্রায় ২০ বছর যাবত একটি সেচ সংযোগ পাইনি। কৃষি উদ্দোক্তা মিলন আরও বলেন, নলকূপটি যে সময় স্থাপন করা হয়েছিল, সে সময়ে কোন অনুমোদনের বা ছাড়পত্রের দরকার হয়নি। তবে র্দীঘদিন ধরে চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও এখনো অজ্ঞাত কারণে সংযোগ দিচ্ছে না পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তানোর জোনাল অফিস। আমরা তেল দিয়ে আর সেচ কাজ চালাতে পারছি না, ফসল উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাচ্ছে এবং ফসল উৎপাদনের ফলনও কমছে। নিরুপায় হয়ে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি, সদস্য সচিব, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পল্লী বিদ্যুৎ এর ডিজিএম বরাবর আবেদনও করেছি। দ্রত বিষয়টির সমাধান করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি। সম্প্রতি মোহর মৌজার ওই ফসলি মাঠে গিয়ে কথা হয় প্রান্তিক কৃষক আজাহার আলী, রফিকুল, ময়েন আলী ও ফরিদা বিবির সঙ্গে। তাঁরা জানান, তাঁদের মোহর গ্রামের পশ্চিম লয়াকুড়ি ফসলি মাঠে স্বল্পমূল্যে সেচ সুবিধা দিতে একটি গভীর নলকূপ আছে। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়ায় গত ২০ বছরেও নলকূপটি পূর্ণাঙ্গভাবে সচল করা সম্ভব হয়নি। ফলে গ্রামবাসী কাক্ষিত সেচ সুবিধা না পেয়ে অন্য ফসল আবাদ করতে বাধ্য হচ্ছেন। দ্রত গভীর নলকূপটিতে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা হোক বলে জোর দাবী জানান কৃষকরা। আবার ওই এলাকার আরেক কৃষক আব্দুল লতিফও একই কথা জানান। পাশাপশি তিনি আরও বলেন, বর্তমানে তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে নলকূপটি বন্ধ হয়ে পড়ায় এই গভীর নলকূপটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ জরুরি হয়ে পড়েছে। উক্ত গভীর নলকূপটির মধ্যে আমার নিজের জমি ও অন্যান্য কৃষকদের প্রায় দেড় থেকে দুই শতাধিক জমি আছে। কিন্তু ওই মাঠে আমাদের জমি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটারের মধ্যে কোন গভীর/অগভীর নলকূপ নেই। মূলত এসব জমি সেচ পানির অভাবে বছরের বেশি সময় প্রায় অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকে। এ নিয়ে তানোর পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) জহরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে উপজেলা সেচ কমিটির অনুমোদনের কাগজ পেলে ওই গভীর নলকূপটিতে সংযোগ দেওয়া হবে। তাছাড়া আপাতত তাঁর করার কিছু নেই বলে জানান।’
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) জামিরুল ইসলাম এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হবে। তবে কৃষককের সমস্যা সমাধানে সব ধরনের উদ্যোগ নিতে উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত আছে বলেও তাঁরা জানান।
Leave a Reply