তানোরবার্তা ডেস্ক : কিশোরগঞ্জের হাওরে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার চাষিরা। তবে হাসি নেই ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষিদের মুখে।
নেক ব্লাস্ট রোগে জেলার প্রায় ৫৮ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধানের শীষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চিটায় পরিণত হয়েছে। বছরের একমাত্র ফসল নষ্ট হওয়ায় ভারাক্রান্ত কৃষকদের মন।
স্থানীয়রা জানান, আগাম পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় ফসলের ক্ষতিরোধে এবার কিশোরগঞ্জের নয়টি উপজেলায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৩ দশমিক ১৭৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার ১৩ উপজেলায় এক লাখ ৬৬ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। তাতে অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৬৯ হাজার ২৯০ হেক্টর। জেলার হাওরাঞ্চলে বোরোধান চাষ হয়েছে এক লাখ তিন হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ব্রি-২৮ ধান যা নেক ব্লাস্টের আক্রমণ হয়েছে সেই ধান চাষ হয়েছে ২৮ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে।
জেলার নিকলী উপজেলার দামপাড়া কামালপুর গ্রামের কৃষক হারুন মিয়া জানান, কামালপুর মাদলের হাওরে চাষ করা এক একর জমির ধান ব্লাস্ট রোগে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। ছাতিরচর এলাকার কৃষক আবদুল মালেক জানান, তিনি সাত একর জমিতে ২৯ ও ৭৯ জাতের ধান চাষ করেছেন। এ রোগে (ব্লাস্ট) আক্রান্ত হয়ে তার বেশির ভাগ ধানই নষ্ট হয়ে গেছে।
জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার সদর ইউনিয়নের মেম্বার মইন উদ্দিনের দুই একর ১২ শতাংশ জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি জানান, জমি থেকে খড় কেটে এনেছেন গরুর খাবারের জন্য। যে কারণে তিনি আর আগামী দিনে আগাম ফসল তোলার আশায় ব্রি-২৮ ধান চাষ করবেন না বলেও জানান।
ইটনা হাওরের কৃষক দুলাল মিয়া বলেন, এবার ব্রি-২৯ ধানসহ অন্য ধানের ফসল খুবই ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে ধানকাটা শুরু করেছি। অর্ধেক জমির ধান কেটে ফেলেছি। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে বাম্পার সোনালি ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।
মিঠামইনের কৃষক অহেদ আলী বলেন, এক মণ ধান উৎপাদন করতে হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এক মণ ধানের বাজার এখন ৭০০ টাকা। তাইলে ধান চাষ করে লাভ হইলো কই? যদি মণপ্রতি ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা বিক্রি হতো তাহলে লাভের আশা করতে পারতাম।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, হাওর উপজেলা ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, নিকলী ও তাড়াইল উপজেলার কিছু অংশে ব্লাস্ট রোগে ধান নষ্ট হয়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে ব্রি-২৮ জাতের ধান। এ রোগে আক্রান্ত গাছের পাতায় ডিম্বাকৃতি থেকে গোলাকার সাদা রঙের দাগসহ গাঢ় বর্ণযুক্ত প্রান্তরেখা লক্ষ্য করা যায়। এ রোগে কাণ্ডের পর্ব ও ধানের শীষও আক্রান্ত হয়। এতে কাণ্ড ভেঙে যায় এবং কচি চারা গাছ মরে যায়। ব্রি-২৮ ধান ছাড়া অন্য ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা ধানকাটা শুরু করেছে। এবার আশা করা যায় পানি আসার আগেভাগেই কৃষকেরা বোরো ধান ঘরে তুলতে পারবে।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান জানান, এবার কিশোরগঞ্জের ৯ উপজেলায় ১৪৭ পিআইসি কমিটির মাধ্যমে ১৭৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মিত হয়েছে। গত বছরের আগাম বন্যার কথা মাথায় রেখে হাওরের বাস্তব অবস্থা চিত্র বিবেচনা করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং এলাকাবাসীর চাহিদা অনুযায়ী পিআইসির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবদুস সাত্তার জানান, ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ না করার জন্য আগে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হয়। কৃষকদের এ রোগ থেকে প্রতিকারের পরামর্শ দিয়েছিলাম। আগে থেকে যাতে প্রয়োজনীয় কীটনাশক স্প্রে করা হয়। হাওর অঞ্চলে ব্লাস্ট রোগে ৫৮ হেক্টর জমির ধান আক্রান্ত হয়েছে। আগামীতে ব্রি-২৮ জাতের ধান যেন একেবারেই চাষ করা না হয় সেজন্য কৃষকদের সতর্ক করেছেন এ কৃষি কর্মকর্তা।
সূত্র : জাগোনিউজ২৪.কম।
Leave a Reply