রুমান শাহরিয়ার,জামালপুরঃগান ও বৈঠার তালে জমজমাট নৌকা বাইচ দেখলো চর বালিয়া পাড়ের মানুষ। জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে ঝিনাই নদীতে গান ও বৈঠার তালে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১৫ই সেপ্টেম্বর) চর বালিয়ায় ঝিনাই নদীতে এ নৌকা বাইচ উৎসবের উদ্বোধন করেন নৌকা বাইচ আয়োজিত কমিটি।এ সময় নৌকা বাইচ দেখতে নদীর দু-পাড়ে অর্ধলক্ষ মানুষের ঢল নামে। সকাল থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে আসতে থাকে দর্শনার্থীরা। অনেকে পরিবার, প্রিয়জন ও বন্ধুদের সঙ্গে নৌকা বাইচ উপভোগ করতে আসেন। বাড়িতে জামাই-মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে এক মিলন মেলায় পরিণিত হয়। বাড়ির বউ-ঝিয়েরা কাজ শেষ করে নদীর পাড়ে এসে নৌকা বাইচ উপভোগ করেন। অন্যদিকে আনন্দ ও উল্লাসে মেতে উঠেন তরুণ-তরুণীরাও।
নৌকাবাইচ উৎসবে জামালপুর, ইসলামপুর,মেলান্দহ,ময়মনসিংহ সহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ছোট-বড় ১২টি নৌকা এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।বাইচ দেখতে আসা এবি মোস্তফা খোকন নামে স্থানীয় একজন বলেন, চর বালিয়ায় নৌকা বাইচ উপলক্ষে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছি। অনেক দিন পর নৌকা বাইচ দেখতে এসেছি। সবাই মিলে উপভোগ করছি, খুব ভালো লাগছে। এখন তো তেমন নৌকা বাইচ দেখাই যায় না। প্রচুর মানুষ এসেছে এ নৌকা বাইচ দেখতে।
তাসমিনা খানম নামে এক গৃহবধূ বলেন, এ ঝিনাই নদীতে প্রতিবছর নৌকা বাইচ খেলা হয়। নৌকা বাইচ উপলক্ষে এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। বাড়িতে আত্মীয়স্বজনরা বেড়াতে আসেন। বাড়ির কাজ-কর্ম শেষ করে সবাই মিলে নদীর পাড়ে বসে নৌকা বাইচ উপভোগ করি।ষাটোর্ধ্ব সুলতান মাহমুদ বলেন, একসময় নদী, বিলে প্রচুর নৌকা বাইচ খেলা হতো। এখন তা দেখা যায় না। আগের মতো এসব খেলা আর হয় না। আমাদের সময় প্রত্যেক নদীতে নৌকা বাইচ হতো। আমরা যুবক বয়সে বহু দুরে যেতাম এ বাইচ দেখতে।
আরিফা জামান নামে আরেক গৃহবধূ বলেন, সকালে স্বামী, সন্তানসহ মামা শ্বশুরের বাড়িতে দাওয়াত শেষ করে নৌকা বাইচ দেখতে এসেছি। অনেক দিনের ইচ্ছা নৌকা বাইচ দেখবো। এত বড় পরিসরে কখনও নৌকা বাইচ দেখা হয়নি। এসে অনেক ভালো লাগছে। হাজার হাজার মানুষ এ নৌকা বাইচ দেখতে এসেছেন। যেন ঈদের মতো আনন্দ লাগছে।চর বালিয়া নৌকাবাইচ উৎসব বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব রুহুল আমিন জানান, চর বালিয়া নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন জেলার ছোট-বড় মিলে ১২টি নৌকা অংশগ্রহণ করেছে।পুরো চর বালিয়ার মানুষ উৎসবে মেতেছেন। নদীর দু-পাড়ে মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থীরা এসেছেন।
এ নৌকা বাইচ উৎসবে প্রতিয়োগিতায় প্রথম বিজয়ী দল রকেট’কে একটি মোটর সাইকেল পুরস্কার দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বিজয়ী দল বাংলার সম্রাট’কে একটি ষাঁড় গরু উপহার দেওয়া হবে। তিনদিনব্যাপী নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতায় ১ম দিন সভাপত্বিত করেন ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি আব্দুল জলিল ফকির।প্রতিযোগিতার ২য় দিন ডোয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক এর সভাপত্বিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আ.লীগের সাধারন সম্পাদক হারুন-অর রশিদ। এসময় নৌকা বাইচ আয়োজিত কমিটি ইউপি সদস্য আব্দুল মালেক, যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম, বিপুল, সাইদুল ইসলাম, বাচ্চু মিয়া প্রমুখ। গ্রামবাংলা ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচে উৎসব দেখতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পান্ত থেকে ছুটে আসেন হাজার হাজার নারী-পুরুষ।
উল্লেখ্য (১৬ই সেপ্টেম্বর) ফাইনাল নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় তা পরেরদিন অনুষ্ঠিত হয়।
Leave a Reply