রাজশাহী ট্রিবিউন২৪ ডেস্ক : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকালে বিমান হামলা বিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ার কিছু আগে তা আরও ছয় ঘণ্টা বাড়াতে জাতিসংঘের প্রতিনিধি জন কেলির মাধ্যমে বার্তা পাঠান মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। সেই সঙ্গে ভারতীয় সামরিক কর্তৃপক্ষকে একজন স্টাফ অফিসার পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন, যাতে অস্ত্র সমর্পণের আয়োজন ঠিক করা সম্ভব হয়। এর কিছু আগেই অবশ্য ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমান্ডের ডিভিশনাল কমান্ডার মেজর জেনারেল গন্ধর্ব সিং নাগরা তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হয়েছিলেন মিরপুর ব্রিজের কাছে। সেখান থেকেই তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজিকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে একটি বার্তা পাঠান। সকাল ৯টায় সেই বার্তা নিয়ে নাগরার এডিসি ক্যাপ্টেন হিতেশ মেহতা ও ২ প্যারা ব্যাটালিয়নের কমান্ডার ক্যাপ্টেন নির্ভয় শর্মা সাদা পতাকা উড়িয়ে মিরপুর ব্রিজের উত্তর পাশ থেকে নিয়াজির হেডকোয়ার্টার্সের দিকে রওনা দেন।
পরে নিয়াজির চিঠি নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ৩৬ ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জামশেদ গাবতলী ব্রিজের পাশে নাগরার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। চিঠিতে নিয়াজি আত্মসমর্পণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এরপর সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে নাগরার বাহিনী ঢাকা শহরে প্রবেশ করে। পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের দলিল এবং সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা চূড়ান্ত করার জন্য ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব কলকাতা থেকে বেলা ১টার দিকে ঢাকায় আসেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের হেডকোয়ার্টার্সে চলে আত্মসমর্পণের দলিল তৈরির বৈঠক।
বিকেল ৪টার আগেই বাংলাদেশ নিয়মিত বাহিনীর দুটি ইউনিটসহ চার ব্যাটালিয়ন সেনা ঢাকায় প্রবেশ করে, সঙ্গে কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা। ঢাকার জনবিরল পথঘাট ক্রমেই জনাকীর্ণ হয়ে উঠতে শুরু করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানমুখর মানুষের ভিড়ে। বিকেল ৪টায় ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান ও বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, বাংলাদেশের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর অন্য প্রতিনিধিরা ঢাকায় অবতরণ করেন। এর অর্ধ ঘণ্টা বাদে তখনকার রেসকোর্স ময়দানে বিপুলসংখ্যক হর্ষোৎফুল্ল মানুষের উপস্থিতিতে যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ দলিলে সই করেন নিয়াজি। (সূত্র: মঈদুল হাসান, মূলধারা ’৭১)
অনুষ্ঠানে ছিলেন ভারতের নৌবাহিনীর নীলকান্ত কৃষ্ণানও। তিনি পরে লিখেছেন, ‘ময়দানের মাঝখানে একটি ছোট টেবিল ও দুটি চেয়ার রাখা হয়েছিল।…সামনে শত শত সংবাদকর্মী ও ক্যামেরা, আর চারদিকে হাজার হাজার মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে, এর মধ্যেই সেই ঐতিহাসিক ক্ষণ উপস্থিত। মোটা সাদা কাগজে দলিলের ছয় কপি প্রস্তুত করা হয়েছিল, যেখানে পাকিস্তানের সকল সেনা ও নৌবাহিনী এবং আধা সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক পুলিশ বাহিনীর আত্মসমর্পণের শর্তাবলিও লেখা ছিল। তাদের যে যেখানে আছে, সেখানে জেনারেল অরোরার বাহিনীর কাছে অস্ত্র নামিয়ে আত্মসমর্পণ করতে হবে।…নিয়াজি পুরো স্বাক্ষর করেন আর এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এক দানবীয় নিপীড়কের হাত থেকে মুক্ত হয়।’ (নো ওয়ে বাট সারেন্ডার)
সূত্র : আজকের পত্রিকা
Leave a Reply